বিভাজনবিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে কার্বোনিফেরাস যুগে (Carboniferous Period) পৃথিবীর মহাদেশগুলো মিলে প্যানগিয়া (Pangaea, গ্রীক Pan = সব + gaia = স্থলভাগ) নামক একটিমাত্র বিশাল ভূখন্ড ছিল । সে সময় উত্তর আমেরিকা ইউরেশিয়ার সাথে, দক্ষিণ আমেরিকা আফ্রিকার সাথে এবং অস্ট্রেলিয়া অ্যান্টার্কটিকার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল। ভারতবর্ষের অবস্থান ছিল আফ্রিকা ও অ্যান্টার্কটিকার মাঝে। এ সময় প্যানগিয়ার চতুদিকে প্যানথালাসা নামে একমাত্র সাগর ছিল। প্রায় ১৮ কোটি বছর পূর্বে ক্রিটেশাস যুগে (Cretaceous Period) সংযুক্ত প্যানগিয়া বিষুবরেখার কিছুটা উপরে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর উত্তর ও দক্ষিণে দুভাগে বিভক্ত হয়। উত্তরাংশের ভূখন্ডটি লরেসিয়া (Laurasia) এবং দক্ষিণাংশের ভূখন্ডটি গন্ডোয়ানাল্যান্ড (Gondwanaland) নামে আত্নপ্রকাশ করে। বিশাল টেথিস সাগর (Tethy Sca) ভূখন্ডদুটিকে পৃথক করে রেখেছিল। আজকের উত্তর আমেরিকা, গ্রিনল্যান্ড ও ইউরেশিয়া লরেসিয়ার মধ্যে এবং দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারতবর্ষ, অ্যান্টার্কটিকা ও অস্ট্রেলিয়া গন্ডোয়ানার অন্তর্ভুক্ত ছিল । এভাবে (পৃথিবীর বৃহৎ ভূখন্ডগুলো ভেঙে পরস্পর থেকে দূরে সরে যাওয়াকে মহাদেশীয় সঞ্চারণ (Continental drift), বলে।
লরেসিয়া বিভক্ত হওয়ার আগেই গন্ডোয়ানাল্যান্ড খন্ডিত হয়। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা থেকে দূরে সরে যাওয়ার মধ্যবর্তীস্থানে আটলান্টিক মহাসাগরের সৃষ্টি হয়। ভারতবর্ষ আদি অবস্থান থেকে দ্রুত সরে গিয়ে এশিয়ার নিম্নভাগে ধাক্কা খেলে টেথিস সাগরের স্থানে হিমালয়ের উদ্ভভ ঘটে। টেথিস সাগরের অংশবিশেষ লোহিত সাগর ও ভূ-মধ্যসাগরে মিশে আছে। পরবর্তিতে অস্ট্রেলিয়া অ্যান্টার্কটিকা থেকে বিভিন্ন হয়ে যায়। অন্যদিকে, লরেসিয়া খন্ডিত হয়ে উত্তর আমেরিকা, গ্রীনল্যান্ড ও ইউরেশিয়ার জন্ম দেয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সবকটি মহাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল এবং বর্তমান রূপ লাভ করেছে প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে।
আরও দেখুন...